ওটা কে ছিলো_Srilekha Kundu

0
0
Share:

ছাদের ফুরফুরে শীতল হাওয়ার মনটা বেশ সতেজ হয়ে গেলো আরোক্ষীর, আজকের খাওয়াটা বেশ চেপে হয়েছে, মনে হচ্ছে আজ অনেকক্ষণ হাঁটাহাঁটি করতে হবে। খাওয়া-দাওয়ার পর হাঁটাহাটি করার অভ্যাস আরোক্ষীর আজকের নয়, সেই কিশোরী বয়স থেকে। বাবা শিখিয়েছিলেন, এতে নাকি খাবার তাড়াতাড়ি হজম হয়। সত্যি কি মিথ্যা জানে না, কিন্তু খাওয়া-দাওয়ার পর প্রত্যেকদিনই এটা করে থাকে আরোক্ষী, আজ মামাবাড়িতে এসেও ব্যাতিক্রম হয়নি। হ্যাঁ আজ সকালেই এসেছে মামাবাড়ি বাবা আর মায়ের সাথে, মা আর আরোক্ষী কটাদিন মামাবাড়িতে কাটাবে, বাবা আজ বিকেলেই চলে গেছেন হঠাৎ একটা কাজ পড়ে যাওয়ায়, না হলে রাতটা থেকে যাবার কথা ছিলো। আজ অনেক বছর পর মামার বাড়িতে থাকা হবে আরোক্ষীর, প্রায় পাঁচ বছর পর তো হবেই। অন্য সময় মাঝে-সাঝে মামাবাড়ি এলেও থাকা হয়নি, এখন উঁচু ক্লাসের পড়াশোনা, চাপও প্রচুর তাই বেশ কয়েক বছর ইচ্ছে উপায় ছিলো না। এখন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর একটু শান্তি। যাইহোক, অনেক দিন পর ভালোভাবে ওদের পেয়ে মামাবাড়ির সবাই খুশি, আরোক্ষীও খুশি। আজ সবাই মিলে বেশ মজা হলো, মামি তো জম্পেস রান্না করেছিলেন, খাসির মাংস, দই ইলিশ, পোলাও, সব মিলিয়ে খাওয়াটা বেশ ভারী হয়ে গেছে।

শীতল হাওয়ায় মোবাইলে গান শুনতে শুনতে বেশ হাটছে আরোক্ষী, হঠাৎ চোখে পড়ল সিড়ির দরজার দিকে, সিঁড়ির দিকটা মিশমিশে অন্ধকার, ছাদেও অবশ্য অন্ধকার তবে তুলনামূলক কম, আজকাল গ্রামের রাস্তায়ও একটু আধটু আলো আছে, আগের মতো একদম মিশ মিশে অন্ধকারটা আর নেই। সেই টিমটিমে আলোয়, ছাদে একটু হলেও অন্ধকার ফিকে হয়েছে, আর সেই আলোতেই আরোক্ষীর মনে হলো, দরজাটা হালকা নড়ে উঠলো না? হ্যাঁ নড়েই তো উঠলো, এমনকি খুট করে হালকা আওয়াজও হলো একটা, দরজার পিছনে কি কেউ আছে? নাকি পুরোটাই মনের ভুল আরোক্ষীর? এতো জোরেও হাওয়া দিচ্ছে না যে দরজাটা ওইভাবে নড়ে উঠবে!! কেউ কি উঠে এসেছে? নাহ্, তাহলে তো সে ছাদে উঠে আসবে, মামাবাড়ির কেউ খামোখা ওখানে কেন দাঁড়াতে যাবে? আর এখন এতো রাতে বাইরের কেউ ও আসবে না। দুর হবে কিছু একটা, এই ভেবে ঠোঁট উল্টে তাচ্ছিল্য করে গান শোনায় মন দিলো আরোক্ষী। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আচমকা আবার সেদিকে চোখ পড়তেই বুকটা ছ্যাৎ করে উঠলো। এবার যেন স্পষ্ট মনে হলো কেউ দরজার ওদিক থেকে আরোক্ষীকে লক্ষ্য করছে !! এখানে ওকে আড়াল থেকে লক্ষ্য করার মতো কে থাকবে? ব্যাপারটা কি হচ্ছে দেখবার জন্য আরোক্ষী মোবাইলের আলো জ্বেলে এগিয়ে গেলো, সিড়ির উপর থেকে নীচে অবধি তন্নতন্ন করে খুঁজেও কাউকেই দেখতে পেলো না আরোক্ষী, দুবারই মনের ভুল, হতে পারে কি? হতে পারে না কেন? হচ্ছেই তো; নিজেকে নিজেই বোঝায় আরোক্ষী। এবার ছাদের দিকে ফিরে সোজাসুজি তাকিয়েই থ হয়ে যায় আরোক্ষী, ছাদের ওইদিকের পাঁচিলের উপর ওটা কে বসে আছে? এবারেও কি চোখের ভুল? কিন্তু তা কি করে হবে অন্য গুলোতে না হয় দেখা যায়নি কিছু, এটা তো বেশ পরিস্কার দেখা যাচ্ছে, কালো রঙের কোনো কিছুর ছায়া, আবার একটু দুলছে না? হ্যাঁ তাই তো… এটা কি কোনো বিড়াল? না তো, বিড়াল কি এতো বড়ো হবে? তাহলে? ভাবতে ভাবতে আগাগোড়া সাহসী আরোক্ষীরও কেমন যেন একটা অনুভূতি হতে লাগলো, মোবাইলের আলো জ্বালিয়েও যে দেখবে সে সাহসেও কুলোচ্ছে না, কিন্তু কিসের যেন অমোঘ আকর্ষণে সেখান থেকে ছুটেও পালিয়ে যেতে পারছে না, বরং সেই বস্তুটির দিকেই এগোতে লাগলো, যেতে যেতে পায়ে কিসের হোঁচট লাগতেই তাড়াতাড়ি আলো জ্বালিয়ে দেখে একটা টব !! আর কালো মতো বস্তুটা আর কিছুই না, ওই টবেরই গাছ !! এবার আর না থাকতে পেরে হায় হায় করে কপাল চাপরাতে লাগলো আরোক্ষী, সত্যি এতো বছর পর মামাবাড়িতে রাত কাটানোর চাপ যে এরম হবে ভাবতেই পারেনি আরোক্ষী, এই নিয়ে তিনবার বোকা বনে গেলো সে, নাতো তিনবার নয় চারবার, ছাদে ওঠার জন্য যখন অন্ধকারে সিড়ির দরজা খুলতে গেছে, তখনই অনুভব করে ঘাড়ে যেন কার নিঃশ্বাস, শুধু তাই নয়; নিঃশ্বাস ফেলবার শব্দটাও যেন শুনেছিলো, সেটা অবশ্য অস্পষ্ট ছিলো। তখনো সাথে সাথেই পিছনে ফেরে আরোক্ষী, কিন্তু ওই কাউকে দেখা তো দূর, কারো অস্তিত্বই টের পায়নি, শুধু চাপ চাপ অন্ধকার ছাড়া।

ধুত্তেরি, নিকুচি করেছে হাঁটাহাঁটির, বিরক্ত হয়ে যেই ছাদ থেকে নীচে যাবার উদ্দেশ্যে পিছনে ঘুরতে যাবে আরোক্ষী, ওমনি “হাউ” শব্দ, সেই সাথে আচমকা পিঠে জোর ধাক্কা !! “বাবা গো”, বলে চিৎকার করে ওঠে আরোক্ষী, ধাক্কার চোটে পড়েও যাচ্ছিল, নেহাত টাল সামলে নিলো তাই। তখনই পিছন দিক থেকে একটা খিলখিল হাসির শব্দ ভেসে আসে। তখনই পিছনে তাকিয়ে দেখে, কান্ডখানা আর কারো নয়, ওর মামাতো বোন পিয়ুলীর। আরোক্ষী তো ওকে দেখে রেগেই আগুন।

পিয়ু তুই, দাঁড়া তোকে আমি…. বলে বোনকে মারতে যেতেই ও খিলখিল করে হাসতে হাসতে দৌড় দিলো, ওর পেছন পেছন আরোক্ষী, কিন্তু ও যে ওকে ধরতেই পারছে না, যখনই ধরতে যাচ্ছে পিয়ুলী যেন ছিটকে চলে যাচ্ছে, এ কি তার বোন পিয়ুলী? যে একবার দৌড়েই ধরা পড়ে যায় !! আর তাছাড়া আরেকটা জিনিস, ও যখনই পিয়ুলীকে ধরতে যাবে, পিয়ুও যেন কিভাবে সরে অন্য দিকে চলে যাচ্ছে, ঠিক যেন হাওয়ায় ভেসে !! আরোক্ষী যা দেখছে সব ঠিক তো? এক সময়ে আরোক্ষী আর না পেরে থেমে গেলো, হাঁপিয়ে উঠেছে ও, দিদির দশা দেখে পিয়ুলী তো হেসেই খুন, তারপর যখন বুঝতে পারলো দিদি রাগ করেছে দিদির কাছে এসে সোজা নিজের কান দুটো ধরে বলে, “সরি দিভাই ভুল হয়ে গেছে, আর হবে না প্লিজ, প্লিইইজ।” বোনকে এরম করতে দেখে আরোক্ষীও রাগ ভুলে হেসে উঠলো, “আচমকা এসে এরম করলি, ভয় লাগে না বলতো?” পিয়ুলী তখনো দুই কানে দুই হাত ধরে দাঁড়িয়ে, “বলছি তো ভুল হয়ে গেছে, আর হবে না।” আরোক্ষীর খুব ভালো লাগলো এরম খলবল করে কথা বলতে থাকা বোনকে দেখে, এতোদিন শুধু ওর শান্ত স্বভাবটাই দেখেছে আরোক্ষী, এই জন্য কম রাগায়নি বোনকে, সকাল বেলা ওরা মামাবাড়িতে আসার পর বোনের সাথে এখনো পর্যন্ত ভালো করে কথা হয়নি আরোক্ষীর, এবার তাহলে বেশ গল্প করা যাবে…

“আচ্ছা আচ্ছা ঠিকাছে, আর কান ধরতে হবে না, আয় গল্প করি” বলে আরোক্ষী নিজেই বোনের কান থেকে হাত দুটো ধরে নামাতে গিয়েই আবার চমকে উঠে হাত সরিয়ে নিলো?

“কি হলো রে দিভাই? চমকে উঠলি যে?” তারপর মুখে হাসি বুলিয়ে বললো, “আবার ভয় পেলি নাকি?”

“না মানে, তোর হাত দুটো এরম বরফের মতো ঠান্ডা কেন রে পিয়ু?”

“হাত দুটো !! ওওও, আসলে আমার খুব গরম লাগছিল তো তাই স্নান করে এসছি, কিন্তু চুল ভেজাইনি, হি হি হি।”

“স্নান, এই রাত্তিরে? তার উপর আবার তুই?”

“হ্যাঁ, কেন?”

“কেন মানে? একে তো ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব, তার উপর রাতের বেলা, অথচ তোর নাকি এতো গরম লাগছে তুই স্নান করে এলি, আর তাছাড়া তুই আগাগোড়া শীত কাতুরে বলে জানি, আর এখন বলছিস…!!!!”

“আর স্নান করলে কি কারো শরীর এরম বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে যায়?” শেষের কথাগুলো আরোক্ষী নিজের মনেই বললো।

“কিরে দিভাই কি বিড়বিড় করছিস?”

“না কিছু না, তবে তুই কথায় কথায় এরম হাসিস না তো ভূতের মতো !!”

হাসি থামিয়ে পিয়ুলী বলে, “ভূতের মতো? আচ্ছা বাবা ঘাট হয়েছে, আর হাসবো না।”

তারপর আরোক্ষী আর পিয়ুলী গল্প করতে লাগলো। আরোক্ষী খেয়াল করলো, পিয়ুলীই যেন একটু বেশিই কথা বলছে, আরোক্ষী কথা কম বলবারই সুযোগ পাচ্ছে, যেটা সচরাচর হয় না। বরং অন্য সময় আরোক্ষী কথা বলতে থাকে, পিয়ু মন দিনে শোনে, হয়তো দু-চার কথার উত্তর দেয়।

খানিকক্ষণ পরে পিয়ুলী বলে ওঠে, “এই দিভাই, অনেক রাত হয়েছে রে, চল এবার নীচে যাই। আচ্ছা আগে আমি যাই, তারপর তুই আয়।” বলে আরোক্ষীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ঝড়ের গতিতে অন্ধকার সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলো।

আরোক্ষী হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে বোনের চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ। বোন চলে যাবার পর আরোক্ষীর মনে হলো চারিদিকে কেমন যেন একটা নিকষ কালো অন্ধকার আর নিরবতা গ্রাস করে আছে। আরোক্ষীর গাটা কি শিরশির করে উঠল? আর অপেক্ষা না করে ছাদ থেকে নেমে এলো সে।

ঘরে এসে দেখে, মা আর মামিমা তখনো বসে গল্প করছে বসার ঘরে। অনেকদিন পর তো দুজন গল্প করার এতো সময় পেয়েছে, তাই কথা আর ফুরুচ্ছে না।

আরোক্ষীকে দেখে মামিমা হাসলেন, মা জিজ্ঞেস করলেন, “কোথায় ছিলি মামন?”

“এইতো ছাদে ছিলাম।”

“ছাদে, এতো রাতে। তুই এতো রাতে ছাদে ছিলি? কেন? আমি ভাবলাম তুই বোধহয় দিদার ঘরে !!” মামিমা তো প্রায় আঁতকে উঠেছেন।

“হ্যাঁ, খাবার পর একটু হাঁটাহাঁটি করছিলাম !! কেন মামি?”

“না না মামন, রাতের বেলা আর ছাদে উঠবি না এরম, একা একা তো নই।”

“কেন গো বউদি, রাতের বেলা ছাদে উঠলে কিসের অসুবিধা, আর মামন তো এমনি সাহসী, তাই…”

মায়ের কথা শেষ না করতে মামি বলে উঠলেন, কিছুটা গম্ভীর ভাবেই, “দেখো ঠাকুরজি, তোমরা শহরের মানুষ তোমাদের কাছে এগুলো হয়তো হাসির বিষয় মনে হবে, কিন্তু আমদের মানে গ্রামের মানুষদের এসব মানতেই হয়, সন্ধ্যের দিকে একা বেরোনো, বা ছাদে ওঠা উচিৎ নয়, কতোকি আমাদের চারিদিকে ঘুরে বেড়ায়, যেগুলো দেখা যায় না, কিন্তু…”

“কিন্তু কি বৌদি? আর তাছাড়া ছোটো থেকে আমিও তো বড়ো হয়েছি এখানে, সেরকম তো কিছু….” মায়ের মুখ থমথমে।

মামিমা হয়তো বুঝতে পারলেন এতোটা গম্ভীর হওয়া উচিৎ হয়নি। তাই নিজেকে তৎক্ষনাত সামলে নিয়ে হাসি মুখে বললেন, “আরে না তেমন কিছু না, আমিও না, কখন কি বলতে কি বলে ফেলি, বলি আজ রাতে কি ঘুমাতে হবে না? কটা বাজে সে খেয়াল আছে? কাল সকালে উঠতে হবে। চলো ঠাকুরঝি শুয়ে পড়া যাক।”

মামিমার কথায় মাও এবার হেসে ফেললেন, তবে হাসিটা যে জোর করে সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারলো আরোক্ষী। মা মামিমাকে বললেন, “হ্যাঁ বৌদি চলো শুয়ে পড়া যাক, অনেক রাত হলো, যা মামন তুইও শুয়ে পড়।”

-হ্যাঁ মামন যা বোনের কাছে গিয়ে শুয়ে পড়, ও ঘরে একা আছে। তোর জন্যই আজকে ও নিজের ঘরে শুয়েছে, নাহলে যা ভীতু, এতো বড়ো হলো এখানো তোর দিদার সাথেই শোয়, আজ তোরা দুইবোনে একসাথে ঘুমা, অনেকদিন পর।

মা বললেন, “ও আরেকটু বড়ো হোক ঠিক হয়ে যাবে, ভেবো না বৌদি। এই তো…..

মা আর মামিমা কথা বলতে বলতে নিজেদের ঘরে চলে গেলেন, কিন্তু আরোক্ষীর মনে জোর খটকা, মামিমা কি বলে গেলেন? বোন ভীতু, একা শুতে ভয় পায় !!!

নাহ্ আর দাড়িয়ে থেকে লাভ নেই, অনেক রাত হলো, এবার শোয়া যাক। এই ভেবে আরোক্ষী বোনের ঘরের দিকে পা বাড়ালো। ঢুকে দেখে পিয়ুলী একটা বই পড়ছে, হাসির বই, এতো মনোযোগ দিয়ে পড়ছে যে দিদি আরোক্ষী ঘরে ঢুকেছে ও টেরই পায়নি। এদিকে আরোক্ষী ভাবছে, বোনটা কি বেরসিক(হাসির গল্পের বই পড়ে বেরসিক?) !! এই রাতেরবেলা কোথায় একটা টানটান ভয় মেশানো ভূতের বই পড়বে, তা না ও বাচ্ছাদের মতো হাসির বই…!! তবে ভূতের কথা মনে আসাতে আরোক্ষীর মাথায় ও একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেললো, সে আচমকা লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে সোজা বোনের পাশে। এদিকে পিয়ুলী তো ভীষণ চমকে গেছে, সে ভয়ে চেচিয়েই ফেলেছে, সেই সাথে একপাশে গুটিশুটি মেরে বসে দেখে দিদি, তবে ও যে খুব ভয় পেয়েছে সেটা ওর মুখ দেখলেই বোঝা যায়। এদিকে আরোক্ষী তো ওর অবস্থা দেখে হেসেই খুন, “কিরে কেমন দিলাম হ্যাঁ, তুই কি ভেবেছিস তুই একাই পারিস, আর কেউ পারে না?”

“দিভাই দেখ, এরকম ইয়ার্কি কিন্তু ভালো লাগে না, জানিস তো আমি ভয় পাই। এখনো আমার বুক ধরফর করছে” বলে পিয়ুলী নিজের বুকে হাত রাখে।

“ও, তাই নাকি, তুমি আবার ভয়ও পাও !! তা নিজের হলেই বুঝি শুধু ভয়টা আসে, আর ছাদে গিয়ে অন্যকে ভয় দেখাতে গিয়ে বুজি খুব সাহস বেড়ে যায়?”

মানে? কে ছাদে গেছে? ছাদে তো তুই গেছিলি, আর ভয়ই বা কে কাকে দেখিয়েছে?”

“বাবা রে, তোর তো দেখছি ভালোই উন্নতি হয়েছে বোনু !! সন্ধ্যাবেলায় দিব্বি ছাদে উঠে আমাকে আচমকা ভয় দেখিয়ে চলে এলি। আবার এখন ভয় পাবার অভিনয়, দারুণ দারুণ।”

“মানে? কি বলছিস দিদি? আমি কখন ছাদে গেলাম? এমনিতেই সিড়ি দিয়ে একা ছাদে উঠতে ভয় পাই, তার উপর আবার তুই বলছিস আমি ভয় দেখিয়েছি !!!”

“তুই কি বলছিস, ওটা তুই ছিলি না, শুধু ছাদে কেন, ছাদের দরজার ওইপার থেকেও তো….”

আরোক্ষীর কথা শেষ না করতে দিয়েই পিয়ুলী বলতে থাকে, “দিভাই, বিশ্বাস কর, তোকে ছুঁয়ে বলছি। আমি তো সন্ধ্যার পর একা ছাদে যেতেই ভয় পাই, আর মাও না বলে। তাও আজকে তুই ছিলি বলে মা যেতে বলছিল, যাতে তোকে ছাদে বেশিক্ষণ থাকতে না করি। কিন্তু বিশ্বাস কর, যাওয়া তো দূর, একা অন্ধকার সিড়িতে উঠতেই ভয় করছিল, তাই যাইনি। ওটা আমি ছিলাম না বিশ্বাস কর।”

“আর তুই কি আজ রাতে স্নান করেছিস?”

“স্নান? এতো রাতে !! তুই কি পাগল হলি দিভাই? বাইরে ঠান্ডা হাওয়া আর আমি করবো এখন স্নান, এই রাতে? আমি তো কাঠ-ফাটা গরমেও এতো রাতে স্নান করি না, বা করলেও খুব কম।”

আরোক্ষী আর কিছু বলতে পারলো না, বোনের কথা শুনে আর কান্না দেখে ওর মনে হলো বোন ঠিকই বলছে। অস্ফুট স্বরে আরোক্ষীর মুখ থেকে একটাই কথা বেরিয়ে এলো, “তাহলে ও কে ছিলো?”

ততক্ষণে আওয়াজ শুনে ও ঘর থেকে মা আর মামিমা এসে গেছেন, “কি হচ্ছে রে হ্যাঁ? এতো রাত হয়ে গেলো তোদের আর কথা শেষ হচ্ছে না !! একি পিয়ু তোর মুখটা ওরম কেন? কি হয়েছে? আর মামন তুই বা অমন মুখ করে বসে কেন? নিশ্চয়ই দুইবোনে ঝগড়া করছিলি?”

কাদো কাদো মুখে পিয়ুলী বললো, “দেখোনা পিসি দিদি কি সব বলছে?”

“কি বলছে?”

“আচ্ছা তোমরাই বলো, আজ কি দিভাই ছাদে ওঠার পর আমি ছাদে গেছিলাম?”

“না তো !!”

“তাহলে দিভাই যে বলছে…”

“কি বলছে? এই, খুলে বল তো তোরা, কি হয়েছে…”

তখন আরোক্ষী আর পিয়ুলী সব ঘটনা ওনাদের দুজনকে খুলে বলে।

আরোক্ষীর মা অবাক হয়ে নিজের বৌদির দিকে তাকাতে দেখেন, তাঁর মুখ সাদা কাগজের মতো ফ্যাকাশে !! কিছুক্ষন পর বলে ওঠেন, “দেখলে ঠাকুরঝি এই জন্যই তখন আমি বলছিলাম।”

“কিন্তু বৌদি….?”

ততক্ষণে আরোক্ষীর দিদা আর মামা এসে গেছেন, ওনারাও সব শুনলেন। যাইহোক, ওরা দুবোন ভয় পেয়ে গেছে দেখে মামা একথা সেকথা বলে কথার মোর অন্য দিকে নিয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ সবাই একসাথে কাটানোর পর যে যার গরে চলে গেল, কিন্তু দিদা ওদের কাছেই সেই রাতে শোবার জন্য রয়ে গেলেন, ছেলেমানুষ, ভয় পেয়েছে, আবার কখন কি হয়।

দুই ননদ বৌদি নিজেদের ঘরে এসে শোবার পর আরোক্ষীর মা কে পিয়ুলীর মা বললেন, “হ্যাঁ তখন কি যেন বলতে বলতে মা এসে পড়ায় থেমে গেলে ঠাকুরজি?”

“আমরাও তো এখানে বড়ো হয়েছি, কোনো দিন তো কিছু….”

“দেখো বউদি, কখন কি হয় বলা হয় না, তাছাড়া তোমাদের একটা কথা বলা হয়নি।”

“কি বলতো বৌদি, কোনো গুরুতর কিছু?”

“ধরে নাও তাই, আমাদের পাড়ার রুননু গো?”

“হ্যাঁ রুননু, ওর তো আমাদের পাড়ার দুটো পাড়া পরেই বিয়ে হয়, একটা মেয়েও আছে, কি যেন নাম ছিলো ওর?

“মেঘালী।”

“হ্যাঁ, মেঘালী। আমাদের পিয়ুর বয়সী বোধহয়, ওরই সাথে খুব ভাব ছিলো, কিন্তু মামনকেও খুব ভালোবাসতো।”

হ্যাঁ, আমাদের বাড়ির সবার সাথেই ওদের ভালো সম্পর্ক, ওর মার সাথে আসতে আসতে এই বাড়ির ন্যাওটা হয়ে গেছিল, আর কাছাকাছি মামাবাড়ি বলে মাঝেমাঝেই আসতো এখানে।”

“আসতো মানে? এখন কি আর আসে না? হ্যাঁ ওর কথা জিজ্ঞেস করবো করবো করে আর করা হয়নি, আমরা এলেই তো ও খবর পেয়ে চলে আসে, এবার দেখছি এখনো আসেনি।”

“আর আসবেও না।”

“আসবে না? কি বলছো বৌদি, কেন আসবে না কেন?”

মাথা ঠান্ডা রেখে শোনো ঠাকুরঝি, মন শক্ত করো। আসবে না কারণ ও আর নেই, তিনদিন আগে কি ভাবে যেন জলে ডুবে মারা যায়।”

“কি বলছো বৌদি?” আরোক্ষীর মা প্রায় চিৎকার কলে ওঠেন। “ওতো আমাকে মাসি মাসি করতো। সেবার মামনের একটা লিপস্টিক দেখে ওর খুব পছন্দ হয়, তাই মামন ওকে দিয়ে দেয়, আর তাতেই কি আনন্দ। আমরা যখন আসতাম, এখানে এলে ওতো আমার মামনের সাথেই বেশি ঘুরতো !!”

“শান্ত হও ঠাকুরঝি, আর একটু আস্তে বলো, মেয়েদুটো এমনিই ভয় পেয়েছে, তার উপর এসব শুনলে…”

আরোক্ষীর মা এবার একটু গলা নীচু করে বললেন, “কেমন কদে হলো গো বৌদি? আমরা এলে ও একদিন না একদিন ঠিক দেখা করে যেতো, কেমন সুন্দর কথা বলতো, একন সেই মেয়েকে আর দেখতে পাবো না !!””

“কেমন করে হলো সেটা আর কি ভাবে বলি ঠাকুরঝি, সাতার জানতো না, তাও পুকুরে গিয়ে স্নান করতো, কারো কথা শুনতো না। পাড়ে বসে মগে জল ভরে ঢালতো, ওতেই ওর আনন্দ ছিলো, অনেকে বলে পা কোনো ভাবে পিছলে গিয়েই নাকি….”

“তবে ঠাকুরঝি, আমি ভাবছি অন্য কথা।”

“কি গো বৌদি?”

“আমাদের কাছে এলেই ও তোমাদের কথা জিজ্ঞেস করতো, মামনের কথা বিশেষ করে, ‘মামন দিদি কবে আসবে?’ একদিন শুনেছিলাম আমার মেয়েকে বলছে, ‘তোর খুব মজা, তোর অমন একটা দিদি আছে, তোকে কতো ভালোবাসে কতো কি দেয়, আমারো যদি থাকতো।’ এইতো, মারা যাবার কদিন আগেও খোঁজ করছিল ‘মামন দিদি কবে আসবে, আসলে বলো কিন্তু’ আর আজ মামনের সাথে এরম হলো।”

আরোক্ষীর মা এসব শুনে নড়েচড়ে বসলেন, “কি বলছো বৌদি, মামনের সাথে আজ যা হলো, তার সাথে কি মেঘালীর মারা যাবার জন্যই, মানে মেঘালী মৃত্যুব পর… না না, এরমও হয়?”

“দেখো ঠাকুরঝি, আগেও বলেছি, কখন যে কি থেকে কি হয় কেউ বলতে পারে না। আপাতত আজকের রাতটা ঠাকুরের নাম করো, কাল মাকে বলে মামন আর পিয়ু দুজনকেই মায়ের মন্দিরে নিয়ে যাবো, আর আমাদের বাড়িতেও কোনো পূজার ব্যবস্থা কথা যায় নাকি দেখবো। আপাতত যে কটাদিন তোমরা থাকবে মামনকে চোখে চোখে রাখতে হবে। আপাতত ঘুমাও।”

“হ্যাঁ সেই ভালো।”

এই ঘটনার পরেই মামন ওরফে আরোক্ষীর খুব জ্বর আসে, যদিও মায়ের মন্দিরে নিয়ে যাবার পর ও সুস্থ হয়। পুজোও দেওয়া হয় আরোক্ষীর মামাবাড়িতে। তবে পুজো দেবার জন্যই কিনা কে জানে ওরম ঘটনা আর কখনই ঘটেনি। তবে আরোক্ষী যে কটাদিন ছিলো মামাবাড়িতে, আর ছাদে যায়নি। যাও বা গেছে, দিনের বেলায়, সন্ধ্যের পর একা একদমই নয়।

ওটা কে ছিলো?

শ্রীলেখা কুন্ডু 

ছাদের ফুরফুরে শীতল হাওয়ার মনটা বেশ সতেজ হয়ে গেলো আরোক্ষীর, আজকের খাওয়াটা বেশ চেপে হয়েছে, মনে হচ্ছে আজ অনেকক্ষণ হাঁটাহাঁটি করতে হবে। খাওয়া-দাওয়ার পর হাঁটাহাটি করার অভ্যাস আরোক্ষীর আজকের নয়, সেই কিশোরী বয়স থেকে। বাবা শিখিয়েছিলেন, এতে নাকি খাবার তাড়াতাড়ি হজম হয়। সত্যি কি মিথ্যা জানে না, কিন্তু খাওয়া-দাওয়ার পর প্রত্যেকদিনই এটা করে থাকে আরোক্ষী, আজ মামাবাড়িতে এসেও ব্যাতিক্রম হয়নি। হ্যাঁ আজ সকালেই এসেছে মামাবাড়ি বাবা আর মায়ের সাথে, মা আর আরোক্ষী কটাদিন মামাবাড়িতে কাটাবে, বাবা আজ বিকেলেই চলে গেছেন হঠাৎ একটা কাজ পড়ে যাওয়ায়, না হলে রাতটা থেকে যাবার কথা ছিলো। আজ অনেক বছর পর মামার বাড়িতে থাকা হবে আরোক্ষীর, প্রায় পাঁচ বছর পর তো হবেই। অন্য সময় মাঝে-সাঝে মামাবাড়ি এলেও থাকা হয়নি, এখন উঁচু ক্লাসের পড়াশোনা, চাপও প্রচুর তাই বেশ কয়েক বছর ইচ্ছে উপায় ছিলো না। এখন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর একটু শান্তি। যাইহোক, অনেক দিন পর ভালোভাবে ওদের পেয়ে মামাবাড়ির সবাই খুশি, আরোক্ষীও খুশি। আজ সবাই মিলে বেশ মজা হলো, মামি তো জম্পেস রান্না করেছিলেন, খাসির মাংস, দই ইলিশ, পোলাও, সব মিলিয়ে খাওয়াটা বেশ ভারী হয়ে গেছে।

শীতল হাওয়ায় মোবাইলে গান শুনতে শুনতে বেশ হাটছে আরোক্ষী, হঠাৎ চোখে পড়ল সিড়ির দরজার দিকে, সিঁড়ির দিকটা মিশমিশে অন্ধকার, ছাদেও অবশ্য অন্ধকার তবে তুলনামূলক কম, আজকাল গ্রামের রাস্তায়ও একটু আধটু আলো আছে, আগের মতো একদম মিশ মিশে অন্ধকারটা আর নেই। সেই টিমটিমে আলোয়, ছাদে একটু হলেও অন্ধকার ফিকে হয়েছে, আর সেই আলোতেই আরোক্ষীর মনে হলো, দরজাটা হালকা নড়ে উঠলো না? হ্যাঁ নড়েই তো উঠলো, এমনকি খুট করে হালকা আওয়াজও হলো একটা, দরজার পিছনে কি কেউ আছে? নাকি পুরোটাই মনের ভুল আরোক্ষীর? এতো জোরেও হাওয়া দিচ্ছে না যে দরজাটা ওইভাবে নড়ে উঠবে!! কেউ কি উঠে এসেছে? নাহ্, তাহলে তো সে ছাদে উঠে আসবে, মামাবাড়ির কেউ খামোখা ওখানে কেন দাঁড়াতে যাবে? আর এখন এতো রাতে বাইরের কেউ ও আসবে না। দুর হবে কিছু একটা, এই ভেবে ঠোঁট উল্টে তাচ্ছিল্য করে গান শোনায় মন দিলো আরোক্ষী। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আচমকা আবার সেদিকে চোখ পড়তেই বুকটা ছ্যাৎ করে উঠলো। এবার যেন স্পষ্ট মনে হলো কেউ দরজার ওদিক থেকে আরোক্ষীকে লক্ষ্য করছে !! এখানে ওকে আড়াল থেকে লক্ষ্য করার মতো কে থাকবে? ব্যাপারটা কি হচ্ছে দেখবার জন্য আরোক্ষী মোবাইলের আলো জ্বেলে এগিয়ে গেলো, সিড়ির উপর থেকে নীচে অবধি তন্নতন্ন করে খুঁজেও কাউকেই দেখতে পেলো না আরোক্ষী, দুবারই মনের ভুল, হতে পারে কি? হতে পারে না কেন? হচ্ছেই তো; নিজেকে নিজেই বোঝায় আরোক্ষী। এবার ছাদের দিকে ফিরে সোজাসুজি তাকিয়েই থ হয়ে যায় আরোক্ষী, ছাদের ওইদিকের পাঁচিলের উপর ওটা কে বসে আছে? এবারেও কি চোখের ভুল? কিন্তু তা কি করে হবে অন্য গুলোতে না হয় দেখা যায়নি কিছু, এটা তো বেশ পরিস্কার দেখা যাচ্ছে, কালো রঙের কোনো কিছুর ছায়া, আবার একটু দুলছে না? হ্যাঁ তাই তো… এটা কি কোনো বিড়াল? না তো, বিড়াল কি এতো বড়ো হবে? তাহলে? ভাবতে ভাবতে আগাগোড়া সাহসী আরোক্ষীরও কেমন যেন একটা অনুভূতি হতে লাগলো, মোবাইলের আলো জ্বালিয়েও যে দেখবে সে সাহসেও কুলোচ্ছে না, কিন্তু কিসের যেন অমোঘ আকর্ষণে সেখান থেকে ছুটেও পালিয়ে যেতে পারছে না, বরং সেই বস্তুটির দিকেই এগোতে লাগলো, যেতে যেতে পায়ে কিসের হোঁচট লাগতেই তাড়াতাড়ি আলো জ্বালিয়ে দেখে একটা টব !! আর কালো মতো বস্তুটা আর কিছুই না, ওই টবেরই গাছ !! এবার আর না থাকতে পেরে হায় হায় করে কপাল চাপরাতে লাগলো আরোক্ষী, সত্যি এতো বছর পর মামাবাড়িতে রাত কাটানোর চাপ যে এরম হবে ভাবতেই পারেনি আরোক্ষী, এই নিয়ে তিনবার বোকা বনে গেলো সে, নাতো তিনবার নয় চারবার, ছাদে ওঠার জন্য যখন অন্ধকারে সিড়ির দরজা খুলতে গেছে, তখনই অনুভব করে ঘাড়ে যেন কার নিঃশ্বাস, শুধু তাই নয়; নিঃশ্বাস ফেলবার শব্দটাও যেন শুনেছিলো, সেটা অবশ্য অস্পষ্ট ছিলো। তখনো সাথে সাথেই পিছনে ফেরে আরোক্ষী, কিন্তু ওই কাউকে দেখা তো দূর, কারো অস্তিত্বই টের পায়নি, শুধু চাপ চাপ অন্ধকার ছাড়া।

ধুত্তেরি, নিকুচি করেছে হাঁটাহাঁটির, বিরক্ত হয়ে যেই ছাদ থেকে নীচে যাবার উদ্দেশ্যে পিছনে ঘুরতে যাবে আরোক্ষী, ওমনি “হাউ” শব্দ, সেই সাথে আচমকা পিঠে জোর ধাক্কা !! “বাবা গো”, বলে চিৎকার করে ওঠে আরোক্ষী, ধাক্কার চোটে পড়েও যাচ্ছিল, নেহাত টাল সামলে নিলো তাই। তখনই পিছন দিক থেকে একটা খিলখিল হাসির শব্দ ভেসে আসে। তখনই পিছনে তাকিয়ে দেখে, কান্ডখানা আর কারো নয়, ওর মামাতো বোন পিয়ুলীর। আরোক্ষী তো ওকে দেখে রেগেই আগুন।

পিয়ু তুই, দাঁড়া তোকে আমি…. বলে বোনকে মারতে যেতেই ও খিলখিল করে হাসতে হাসতে দৌড় দিলো, ওর পেছন পেছন আরোক্ষী, কিন্তু ও যে ওকে ধরতেই পারছে না, যখনই ধরতে যাচ্ছে পিয়ুলী যেন ছিটকে চলে যাচ্ছে, এ কি তার বোন পিয়ুলী? যে একবার দৌড়েই ধরা পড়ে যায় !! আর তাছাড়া আরেকটা জিনিস, ও যখনই পিয়ুলীকে ধরতে যাবে, পিয়ুও যেন কিভাবে সরে অন্য দিকে চলে যাচ্ছে, ঠিক যেন হাওয়ায় ভেসে !! আরোক্ষী যা দেখছে সব ঠিক তো? এক সময়ে আরোক্ষী আর না পেরে থেমে গেলো, হাঁপিয়ে উঠেছে ও, দিদির দশা দেখে পিয়ুলী তো হেসেই খুন, তারপর যখন বুঝতে পারলো দিদি রাগ করেছে দিদির কাছে এসে সোজা নিজের কান দুটো ধরে বলে, “সরি দিভাই ভুল হয়ে গেছে, আর হবে না প্লিজ, প্লিইইজ।” বোনকে এরম করতে দেখে আরোক্ষীও রাগ ভুলে হেসে উঠলো, “আচমকা এসে এরম করলি, ভয় লাগে না বলতো?” পিয়ুলী তখনো দুই কানে দুই হাত ধরে দাঁড়িয়ে, “বলছি তো ভুল হয়ে গেছে, আর হবে না।” আরোক্ষীর খুব ভালো লাগলো এরম খলবল করে কথা বলতে থাকা বোনকে দেখে, এতোদিন শুধু ওর শান্ত স্বভাবটাই দেখেছে আরোক্ষী, এই জন্য কম রাগায়নি বোনকে, সকাল বেলা ওরা মামাবাড়িতে আসার পর বোনের সাথে এখনো পর্যন্ত ভালো করে কথা হয়নি আরোক্ষীর, এবার তাহলে বেশ গল্প করা যাবে…

“আচ্ছা আচ্ছা ঠিকাছে, আর কান ধরতে হবে না, আয় গল্প করি” বলে আরোক্ষী নিজেই বোনের কান থেকে হাত দুটো ধরে নামাতে গিয়েই আবার চমকে উঠে হাত সরিয়ে নিলো?

“কি হলো রে দিভাই? চমকে উঠলি যে?” তারপর মুখে হাসি বুলিয়ে বললো, “আবার ভয় পেলি নাকি?”

“না মানে, তোর হাত দুটো এরম বরফের মতো ঠান্ডা কেন রে পিয়ু?”

“হাত দুটো !! ওওও, আসলে আমার খুব গরম লাগছিল তো তাই স্নান করে এসছি, কিন্তু চুল ভেজাইনি, হি হি হি।”

“স্নান, এই রাত্তিরে? তার উপর আবার তুই?”

“হ্যাঁ, কেন?”

“কেন মানে? একে তো ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব, তার উপর রাতের বেলা, অথচ তোর নাকি এতো গরম লাগছে তুই স্নান করে এলি, আর তাছাড়া তুই আগাগোড়া শীত কাতুরে বলে জানি, আর এখন বলছিস…!!!!”

“আর স্নান করলে কি কারো শরীর এরম বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে যায়?” শেষের কথাগুলো আরোক্ষী নিজের মনেই বললো।

“কিরে দিভাই কি বিড়বিড় করছিস?”

“না কিছু না, তবে তুই কথায় কথায় এরম হাসিস না তো ভূতের মতো !!”

হাসি থামিয়ে পিয়ুলী বলে, “ভূতের মতো? আচ্ছা বাবা ঘাট হয়েছে, আর হাসবো না।”

তারপর আরোক্ষী আর পিয়ুলী গল্প করতে লাগলো। আরোক্ষী খেয়াল করলো, পিয়ুলীই যেন একটু বেশিই কথা বলছে, আরোক্ষী কথা কম বলবারই সুযোগ পাচ্ছে, যেটা সচরাচর হয় না। বরং অন্য সময় আরোক্ষী কথা বলতে থাকে, পিয়ু মন দিনে শোনে, হয়তো দু-চার কথার উত্তর দেয়।

খানিকক্ষণ পরে পিয়ুলী বলে ওঠে, “এই দিভাই, অনেক রাত হয়েছে রে, চল এবার নীচে যাই। আচ্ছা আগে আমি যাই, তারপর তুই আয়।” বলে আরোক্ষীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ঝড়ের গতিতে অন্ধকার সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলো।

আরোক্ষী হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে বোনের চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ। বোন চলে যাবার পর আরোক্ষীর মনে হলো চারিদিকে কেমন যেন একটা নিকষ কালো অন্ধকার আর নিরবতা গ্রাস করে আছে। আরোক্ষীর গাটা কি শিরশির করে উঠল? আর অপেক্ষা না করে ছাদ থেকে নেমে এলো সে।

ঘরে এসে দেখে, মা আর মামিমা তখনো বসে গল্প করছে বসার ঘরে। অনেকদিন পর তো দুজন গল্প করার এতো সময় পেয়েছে, তাই কথা আর ফুরুচ্ছে না।

আরোক্ষীকে দেখে মামিমা হাসলেন, মা জিজ্ঞেস করলেন, “কোথায় ছিলি মামন?”

“এইতো ছাদে ছিলাম।”

“ছাদে, এতো রাতে। তুই এতো রাতে ছাদে ছিলি? কেন? আমি ভাবলাম তুই বোধহয় দিদার ঘরে !!” মামিমা তো প্রায় আঁতকে উঠেছেন।

“হ্যাঁ, খাবার পর একটু হাঁটাহাঁটি করছিলাম !! কেন মামি?”

“না না মামন, রাতের বেলা আর ছাদে উঠবি না এরম, একা একা তো নই।”

“কেন গো বউদি, রাতের বেলা ছাদে উঠলে কিসের অসুবিধা, আর মামন তো এমনি সাহসী, তাই…”

মায়ের কথা শেষ না করতে মামি বলে উঠলেন, কিছুটা গম্ভীর ভাবেই, “দেখো ঠাকুরজি, তোমরা শহরের মানুষ তোমাদের কাছে এগুলো হয়তো হাসির বিষয় মনে হবে, কিন্তু আমদের মানে গ্রামের মানুষদের এসব মানতেই হয়, সন্ধ্যের দিকে একা বেরোনো, বা ছাদে ওঠা উচিৎ নয়, কতোকি আমাদের চারিদিকে ঘুরে বেড়ায়, যেগুলো দেখা যায় না, কিন্তু…”

“কিন্তু কি বৌদি? আর তাছাড়া ছোটো থেকে আমিও তো বড়ো হয়েছি এখানে, সেরকম তো কিছু….” মায়ের মুখ থমথমে।

মামিমা হয়তো বুঝতে পারলেন এতোটা গম্ভীর হওয়া উচিৎ হয়নি। তাই নিজেকে তৎক্ষনাত সামলে নিয়ে হাসি মুখে বললেন, “আরে না তেমন কিছু না, আমিও না, কখন কি বলতে কি বলে ফেলি, বলি আজ রাতে কি ঘুমাতে হবে না? কটা বাজে সে খেয়াল আছে? কাল সকালে উঠতে হবে। চলো ঠাকুরঝি শুয়ে পড়া যাক।”

মামিমার কথায় মাও এবার হেসে ফেললেন, তবে হাসিটা যে জোর করে সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারলো আরোক্ষী। মা মামিমাকে বললেন, “হ্যাঁ বৌদি চলো শুয়ে পড়া যাক, অনেক রাত হলো, যা মামন তুইও শুয়ে পড়।”

-হ্যাঁ মামন যা বোনের কাছে গিয়ে শুয়ে পড়, ও ঘরে একা আছে। তোর জন্যই আজকে ও নিজের ঘরে শুয়েছে, নাহলে যা ভীতু, এতো বড়ো হলো এখানো তোর দিদার সাথেই শোয়, আজ তোরা দুইবোনে একসাথে ঘুমা, অনেকদিন পর।

মা বললেন, “ও আরেকটু বড়ো হোক ঠিক হয়ে যাবে, ভেবো না বৌদি। এই তো…..

মা আর মামিমা কথা বলতে বলতে নিজেদের ঘরে চলে গেলেন, কিন্তু আরোক্ষীর মনে জোর খটকা, মামিমা কি বলে গেলেন? বোন ভীতু, একা শুতে ভয় পায় !!!

নাহ্ আর দাড়িয়ে থেকে লাভ নেই, অনেক রাত হলো, এবার শোয়া যাক। এই ভেবে আরোক্ষী বোনের ঘরের দিকে পা বাড়ালো। ঢুকে দেখে পিয়ুলী একটা বই পড়ছে, হাসির বই, এতো মনোযোগ দিয়ে পড়ছে যে দিদি আরোক্ষী ঘরে ঢুকেছে ও টেরই পায়নি। এদিকে আরোক্ষী ভাবছে, বোনটা কি বেরসিক(হাসির গল্পের বই পড়ে বেরসিক?) !! এই রাতেরবেলা কোথায় একটা টানটান ভয় মেশানো ভূতের বই পড়বে, তা না ও বাচ্ছাদের মতো হাসির বই…!! তবে ভূতের কথা মনে আসাতে আরোক্ষীর মাথায় ও একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেললো, সে আচমকা লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে সোজা বোনের পাশে। এদিকে পিয়ুলী তো ভীষণ চমকে গেছে, সে ভয়ে চেচিয়েই ফেলেছে, সেই সাথে একপাশে গুটিশুটি মেরে বসে দেখে দিদি, তবে ও যে খুব ভয় পেয়েছে সেটা ওর মুখ দেখলেই বোঝা যায়। এদিকে আরোক্ষী তো ওর অবস্থা দেখে হেসেই খুন, “কিরে কেমন দিলাম হ্যাঁ, তুই কি ভেবেছিস তুই একাই পারিস, আর কেউ পারে না?”

“দিভাই দেখ, এরকম ইয়ার্কি কিন্তু ভালো লাগে না, জানিস তো আমি ভয় পাই। এখনো আমার বুক ধরফর করছে” বলে পিয়ুলী নিজের বুকে হাত রাখে।

“ও, তাই নাকি, তুমি আবার ভয়ও পাও !! তা নিজের হলেই বুঝি শুধু ভয়টা আসে, আর ছাদে গিয়ে অন্যকে ভয় দেখাতে গিয়ে বুজি খুব সাহস বেড়ে যায়?”

মানে? কে ছাদে গেছে? ছাদে তো তুই গেছিলি, আর ভয়ই বা কে কাকে দেখিয়েছে?”

“বাবা রে, তোর তো দেখছি ভালোই উন্নতি হয়েছে বোনু !! সন্ধ্যাবেলায় দিব্বি ছাদে উঠে আমাকে আচমকা ভয় দেখিয়ে চলে এলি। আবার এখন ভয় পাবার অভিনয়, দারুণ দারুণ।”

“মানে? কি বলছিস দিদি? আমি কখন ছাদে গেলাম? এমনিতেই সিড়ি দিয়ে একা ছাদে উঠতে ভয় পাই, তার উপর আবার তুই বলছিস আমি ভয় দেখিয়েছি !!!”

“তুই কি বলছিস, ওটা তুই ছিলি না, শুধু ছাদে কেন, ছাদের দরজার ওইপার থেকেও তো….”

আরোক্ষীর কথা শেষ না করতে দিয়েই পিয়ুলী বলতে থাকে, “দিভাই, বিশ্বাস কর, তোকে ছুঁয়ে বলছি। আমি তো সন্ধ্যার পর একা ছাদে যেতেই ভয় পাই, আর মাও না বলে। তাও আজকে তুই ছিলি বলে মা যেতে বলছিল, যাতে তোকে ছাদে বেশিক্ষণ থাকতে না করি। কিন্তু বিশ্বাস কর, যাওয়া তো দূর, একা অন্ধকার সিড়িতে উঠতেই ভয় করছিল, তাই যাইনি। ওটা আমি ছিলাম না বিশ্বাস কর।”

“আর তুই কি আজ রাতে স্নান করেছিস?”

“স্নান? এতো রাতে !! তুই কি পাগল হলি দিভাই? বাইরে ঠান্ডা হাওয়া আর আমি করবো এখন স্নান, এই রাতে? আমি তো কাঠ-ফাটা গরমেও এতো রাতে স্নান করি না, বা করলেও খুব কম।”

আরোক্ষী আর কিছু বলতে পারলো না, বোনের কথা শুনে আর কান্না দেখে ওর মনে হলো বোন ঠিকই বলছে। অস্ফুট স্বরে আরোক্ষীর মুখ থেকে একটাই কথা বেরিয়ে এলো, “তাহলে ও কে ছিলো?”

ততক্ষণে আওয়াজ শুনে ও ঘর থেকে মা আর মামিমা এসে গেছেন, “কি হচ্ছে রে হ্যাঁ? এতো রাত হয়ে গেলো তোদের আর কথা শেষ হচ্ছে না !! একি পিয়ু তোর মুখটা ওরম কেন? কি হয়েছে? আর মামন তুই বা অমন মুখ করে বসে কেন? নিশ্চয়ই দুইবোনে ঝগড়া করছিলি?”

কাদো কাদো মুখে পিয়ুলী বললো, “দেখোনা পিসি দিদি কি সব বলছে?”

“কি বলছে?”

“আচ্ছা তোমরাই বলো, আজ কি দিভাই ছাদে ওঠার পর আমি ছাদে গেছিলাম?”

“না তো !!”

“তাহলে দিভাই যে বলছে…”

“কি বলছে? এই, খুলে বল তো তোরা, কি হয়েছে…”

তখন আরোক্ষী আর পিয়ুলী সব ঘটনা ওনাদের দুজনকে খুলে বলে।

আরোক্ষীর মা অবাক হয়ে নিজের বৌদির দিকে তাকাতে দেখেন, তাঁর মুখ সাদা কাগজের মতো ফ্যাকাশে !! কিছুক্ষন পর বলে ওঠেন, “দেখলে ঠাকুরঝি এই জন্যই তখন আমি বলছিলাম।”

“কিন্তু বৌদি….?”

ততক্ষণে আরোক্ষীর দিদা আর মামা এসে গেছেন, ওনারাও সব শুনলেন। যাইহোক, ওরা দুবোন ভয় পেয়ে গেছে দেখে মামা একথা সেকথা বলে কথার মোর অন্য দিকে নিয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ সবাই একসাথে কাটানোর পর যে যার গরে চলে গেল, কিন্তু দিদা ওদের কাছেই সেই রাতে শোবার জন্য রয়ে গেলেন, ছেলেমানুষ, ভয় পেয়েছে, আবার কখন কি হয়।

দুই ননদ বৌদি নিজেদের ঘরে এসে শোবার পর আরোক্ষীর মা কে পিয়ুলীর মা বললেন, “হ্যাঁ তখন কি যেন বলতে বলতে মা এসে পড়ায় থেমে গেলে ঠাকুরজি?”

“আমরাও তো এখানে বড়ো হয়েছি, কোনো দিন তো কিছু….”

“দেখো বউদি, কখন কি হয় বলা হয় না, তাছাড়া তোমাদের একটা কথা বলা হয়নি।”

“কি বলতো বৌদি, কোনো গুরুতর কিছু?”

“ধরে নাও তাই, আমাদের পাড়ার রুননু গো?”

“হ্যাঁ রুননু, ওর তো আমাদের পাড়ার দুটো পাড়া পরেই বিয়ে হয়, একটা মেয়েও আছে, কি যেন নাম ছিলো ওর?

“মেঘালী।”

“হ্যাঁ, মেঘালী। আমাদের পিয়ুর বয়সী বোধহয়, ওরই সাথে খুব ভাব ছিলো, কিন্তু মামনকেও খুব ভালোবাসতো।”

হ্যাঁ, আমাদের বাড়ির সবার সাথেই ওদের ভালো সম্পর্ক, ওর মার সাথে আসতে আসতে এই বাড়ির ন্যাওটা হয়ে গেছিল, আর কাছাকাছি মামাবাড়ি বলে মাঝেমাঝেই আসতো এখানে।”

“আসতো মানে? এখন কি আর আসে না? হ্যাঁ ওর কথা জিজ্ঞেস করবো করবো করে আর করা হয়নি, আমরা এলেই তো ও খবর পেয়ে চলে আসে, এবার দেখছি এখনো আসেনি।”

“আর আসবেও না।”

“আসবে না? কি বলছো বৌদি, কেন আসবে না কেন?”

মাথা ঠান্ডা রেখে শোনো ঠাকুরঝি, মন শক্ত করো। আসবে না কারণ ও আর নেই, তিনদিন আগে কি ভাবে যেন জলে ডুবে মারা যায়।”

“কি বলছো বৌদি?” আরোক্ষীর মা প্রায় চিৎকার কলে ওঠেন। “ওতো আমাকে মাসি মাসি করতো। সেবার মামনের একটা লিপস্টিক দেখে ওর খুব পছন্দ হয়, তাই মামন ওকে দিয়ে দেয়, আর তাতেই কি আনন্দ। আমরা যখন আসতাম, এখানে এলে ওতো আমার মামনের সাথেই বেশি ঘুরতো !!”

“শান্ত হও ঠাকুরঝি, আর একটু আস্তে বলো, মেয়েদুটো এমনিই ভয় পেয়েছে, তার উপর এসব শুনলে…”

আরোক্ষীর মা এবার একটু গলা নীচু করে বললেন, “কেমন কদে হলো গো বৌদি? আমরা এলে ও একদিন না একদিন ঠিক দেখা করে যেতো, কেমন সুন্দর কথা বলতো, একন সেই মেয়েকে আর দেখতে পাবো না !!””

“কেমন করে হলো সেটা আর কি ভাবে বলি ঠাকুরঝি, সাতার জানতো না, তাও পুকুরে গিয়ে স্নান করতো, কারো কথা শুনতো না। পাড়ে বসে মগে জল ভরে ঢালতো, ওতেই ওর আনন্দ ছিলো, অনেকে বলে পা কোনো ভাবে পিছলে গিয়েই নাকি….”

“তবে ঠাকুরঝি, আমি ভাবছি অন্য কথা।”

“কি গো বৌদি?”

“আমাদের কাছে এলেই ও তোমাদের কথা জিজ্ঞেস করতো, মামনের কথা বিশেষ করে, ‘মামন দিদি কবে আসবে?’ একদিন শুনেছিলাম আমার মেয়েকে বলছে, ‘তোর খুব মজা, তোর অমন একটা দিদি আছে, তোকে কতো ভালোবাসে কতো কি দেয়, আমারো যদি থাকতো।’ এইতো, মারা যাবার কদিন আগেও খোঁজ করছিল ‘মামন দিদি কবে আসবে, আসলে বলো কিন্তু’ আর আজ মামনের সাথে এরম হলো।”

আরোক্ষীর মা এসব শুনে নড়েচড়ে বসলেন, “কি বলছো বৌদি, মামনের সাথে আজ যা হলো, তার সাথে কি মেঘালীর মারা যাবার জন্যই, মানে মেঘালী মৃত্যুব পর… না না, এরমও হয়?”

“দেখো ঠাকুরঝি, আগেও বলেছি, কখন যে কি থেকে কি হয় কেউ বলতে পারে না। আপাতত আজকের রাতটা ঠাকুরের নাম করো, কাল মাকে বলে মামন আর পিয়ু দুজনকেই মায়ের মন্দিরে নিয়ে যাবো, আর আমাদের বাড়িতেও কোনো পূজার ব্যবস্থা কথা যায় নাকি দেখবো। আপাতত যে কটাদিন তোমরা থাকবে মামনকে চোখে চোখে রাখতে হবে। আপাতত ঘুমাও।”

“হ্যাঁ সেই ভালো।”

এই ঘটনার পরেই মামন ওরফে আরোক্ষীর খুব জ্বর আসে, যদিও মায়ের মন্দিরে নিয়ে যাবার পর ও সুস্থ হয়। পুজোও দেওয়া হয় আরোক্ষীর মামাবাড়িতে। তবে পুজো দেবার জন্যই কিনা কে জানে ওরম ঘটনা আর কখনই ঘটেনি। তবে আরোক্ষী যে কটাদিন ছিলো মামাবাড়িতে, আর ছাদে যায়নি। যাও বা গেছে, দিনের বেলায়, সন্ধ্যের পর একা একদমই নয়।

user

Writer & Blogger

Related Posts:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Popular Posts

Newsletter

JOIN THE FAMILY!

You have been successfully Subscribed! Please Connect to Mailchimp first

Featured Posts

Categories

Edit Template

Dhulobali, a platform for collaborative creativity. It empowers users to share ideas and innovate together in cultural arena.

Get In Touch

3540 Toringdon Way Suite 200 Charlotte, NC, US 28277