আক্ষেপ_Sudipto Mukherjee

0
0
Share:

-বৌদিভাই আজ জমিয়ে ইলিশ মাছ টা রান্না করো দেখি। সর্ষে ইলিশ করবে কিন্তু ওপরে কাঁচা লঙ্কা দিয়ে । আমার তো ভেবেই মুখে জল চলে আসছে। ও হ্যাঁ আমার জন্য ভাজা মাছ কিন্তু দু-এক পিস এক্সট্রা রেখো।

একটু মুচকি হেসে শিল্পা বললো,

-ওরে বাবা রাখবো রাখবো। আমার ছোটো দেওর আবদার করেছে তাহলে তো রাখতেই হবে। আচ্ছা। বেশ সর্ষে ইলিশই হবে। তোমার পছন্দ মতো। এবার খুশি তো আদি বাবু?

-আরে হ্যাঁ ভীষণ খুশি। তোমার হাতের‌ সর্ষে ইলিশ সাথে বাঁশকাঠি  চালের ভাত। ওহ! আজ‌ দুপুরে খাবারটা জাস্ট জমে যাবে‌।

-হয়েছে হয়েছে। আর বৌদিভাইয়ের তারিফ করতে হবে না। তাড়াতাড়ি স্নানে যাও নাহলে মা আবার চিৎকার করবেন দুপুরের খাবার দিতে দেরি হলে।

-ভাজা মাছটা আমার জন্য রাখতে ভুলোনা কিন্ত মেজো বউদি।

আরে, হ্যাঁ ঠিক আছে রাখবো। তুমি এবার স্নানে যাও তো‌ ঠাকুরপো। আমার রান্না প্রায় শেষের দিকে।”

-জো হুকুম।

-এই আদি… স্নানে গেলি? পরে‌ বকবক করবি মেয়েটার সাথে। আমাকে হাতের কাজ ফেলে যদি উঠতে হয়েছে তাহলে এসে কিন্তু গরম খুন্তির ছেঁকা দেবো‌ মনে থাকে যেন।

ধুর! যাচ্ছি তো। এত চেঁচাও কেন মা ? চিৎকার করার কোনো কম্পিটিশন হলে তুমি নির্ঘাত ফার্স্ট প্রাইজ পেতে।

-মার খাবি আদি। তাড়াতাড়ি স্নানে করে আয়।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আদি স্নান সেরে এসে রীতিমতো হাঁকডাক শুরু করে দিলো।

-মা জলদি খেতে দাও। আমার পেটে ছুঁচো ডন মারছে তো। ও বৌদিভাই তুমি তো জানো আমি স্নান করে বসে থাকতে পারিনা আমার খুব খিদে পায়। এখন আর কারো কোনো সাড়াশব্দ নেই। রবিবারের ছুটি বাড়ি একটু বসে ওয়েব সিরিজ টাও দেখতে দেবে না। সাত তাড়াতাড়ি স্নান কর, স্নান করে মাথা খারাপ করে দেবে। ধুর! ভাল্লাগেনা।

-এত রাগলে হয় আদি বাবু? বিয়ের পর তো মিলির রাগ, দুঃখ,কষ্ট , অভিযোগের বোঝা তো তোমাকেই বইতে হবে নাকি?

-তুমি!

-আমি কি করে জানলাম তাই তো? তোমার মোবাইলে তোমার আর মিলির ছবিটা প্রথম দেখি। বাই দ্যা ওয়ে খুব কিউট কিন্তু। আমার মিষ্টি ঠাকুরপোর সাথে খুব মানিয়েছে।

মুচকি হেসে আদি বললো,

-থ্যাংক ইউ বৌদিভাই। তুমি তো জানো মা আমাকে আর দাদাকে নিয়ে কতটা পজেসিভ আর তোমাদের বিয়ে টা মা মন থেকে মেনে নিতে পারেনি তাই তোমাকে অনেক কড়া কড়া কথা শুনতে হয়। আমার তো মিলিকে নিয়ে খুব চিন্তা হয় ওর যা মাথা গরম মাকে কি বলতে কি বলে বসবে তখন আরেক ঝামেলা। তখন আমি কার দিকে যাবো বলোতো?

হাসতে হাসতে শিল্পা বললো,

-ব্যাপারটা কিন্তু খুবই চিন্তার ঠাকুরপো।‌ এই বিষয়ে তোমার দাদার কাছে টিপস নিতে পারো। বিয়ের পর কিভাবে মা আর বউকে একসাথে ম্যানেজ করবে আর মা আমাদের বিয়েটা মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। সেটা আমিও জানি। কি করবো বলো তোমার দাদাকে তো ছেড়ে চলে যেতে পারি না। বড্ড ভালোবাসি যে। মায়ের বয়স হয়েছে তাই ওনাকেও দোষ দেওয়া যায় না। ছেলে অপছন্দের মেয়েকে বিয়ে করলে মায়ের রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক কিন্তু আমার বিশ্বাস মা একদিন আমাকে মন থেকে ঠিক মেনে নেবেন। তবে মাঝেমধ্যে মায়ের বলা কিছু কথা শুনে খুব খারাপ লাগে। আমিতো ওনার মেয়েরই মত। যাইহোক অনেক বকবক হয়েছে এবার খেতে এসো দেখি।

-বৌদিভাই তুমি কাঁদছো?

-কই না তো। চোখে কি যেন একটা পড়লো। তুমি খেতে এসো ঠাকুরপো। খাবার বেড়ে বসে থাকতে নেই। তাড়াতাড়ি এসো।

-হুম। আসছি তুমি যাও।

-ঠাকুরপো তাড়াতাড়ি এসো। ভাত বেড়ে দিয়েছি।

-এই তো এসে গেছি। আরে বাপরে! এত কিছু ! ভাত, মাছের মাথা দিয়ে ডাল, ইলিশ মাছ ভাজা, চিকেন কষা  আবার আমার ফেভারিট সর্ষে ইলিশ আর আমের চাটনি। লাঞ্চ তো পুরো জমে ক্ষীর‌ বৌদিভাই।

-চিকেন কষাটা ইউটিউব দেখে ফার্স্ট টাইম ট্রাই করলাম। কেমন হয়েছে বলোতো?

-টেস্ট করে বলছি।

-হুম। বলো কেমন হয়েছে?

-উফ! এক কথায় অনবদ্য। তোমার হাতে জাদু আছে কিন্তু বৌদিভাই।

-খেতে এত ভালো হয়েছে ঠাকুরপো?

-তা তো হবেই বৌদিভাই। কে রান্না করেছে দেখতে হবে তো। একেবারে সাক্ষাত দেবী অন্নপূর্ণা।

-বাবাগো বাবা। ঢং দেখলে বাঁচিনা। আদি একেবারে দেবী আসনে বসিয়ে দিলি মেয়েটাকে? কটা দিন হলো তো এই বাড়িতে এসেছে।

-উফ! মা চুপ করো তো। বৌদিভাই রান্না ভালো করেছে তাই প্রশংসা করেছি। তাতে কি সমস্যা?

-এতদিন তো আমার হাতের রান্না চেটেপুটে খেতিস। আজ এই মেয়েটা আমার ছেলেটাকে বিয়ে করে দুদিন বাড়িতে আসতে না আসতেই সবার ওপর কি যাদু করলো কে জানে? হ্যাঁ গো মেয়ে তা তুমি কি বশীকরণ জানো নাকি?‌ আমার বড় ছেলেটার মাথা খেয়ে তো বিয়ে করে বাড়িতে পা দিলে এবার ছোট ছেলেটার মাথা খাওয়া শুরু করেছো। যে ছেলে আমার অনুমতি ছাড়া কোনোদিন কোনো কাজ করেনি। সেই ছেলে একেবারে তোমার সিঁথিতে সিঁদুর তুলে একেবারে বাড়িতে এনে হাজির করলো। ভালো ভালো রান্না আর মিষ্টি কথাতে ভুলিয়ে আমার ছেলেদের মাথা খেয়ে তাদেরকে তোমার দলে টানতে পারো তুমি যদি ভেবে থাকো এভাবে আমাকেও বশ করবে তাহলে সম্পূর্ণ ভুল ভাবছো।

-তুমি আর একটা বাজে কথা বৌদিভাইকে নিয়ে বললে আমি কিন্তু খাবার ছেড়ে আবার উঠে যাবো। তোমার সমস্যা টা ঠিক কোন জায়গায় বলবে আমাকে মা?

-দুদিন আগে বাড়িতে আসা মেয়েটার জন্য তুই তোর মায়ের সাথে ঝগড়া করছিস? তোর দাদা তো বিয়ের পর একটা মেরুদণ্ডহীন পুরুষে পরিণত হয়েছে । বউয়ের কথাই ওঠে আর বসে। তুইও ট্রেনারের কাছে ট্রেনিং টা ভালোই পাচ্ছিস। তুইও কাউকে একটা ধরে নিয়ে আয় তাহলে ষোলো করা পূর্ন হয়। তারপর দু বউ মিলে বাড়িতে রাজত্ব করুক আর তোরা দু ভাই বৌদের পদসেবা করবি। এই দিনটা দেখার জন্যই তো ভগবান আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করি এই দিন দেখার আগে যেন তাড়াতাড়ি ওপরে যেতে পারি।

-ধুর! তোমার রোজকার এই এক অশান্তি আমার আর ভালো লাগে না। নিকুচি করেছে খাবার।

-ঠাকুরপো না খেয়ে উঠতে নেই। বসো।

-না বৌদিভাই মায়ের এই একই অশান্তি আমার আর ভালো লাগছে না। ছুটির দিনে বাড়িতে আছি একটু শান্তিতে খাবার খাওয়ার জো নেই। অনেক খাওয়া হয়েছে। আমার পেটে ভর্তি। আমি উঠলাম।

-মায়ের সাথে কেউ এইভাবে কথা বলে? আমি যেন আর না দেখি তুমি এভাবে মায়ের সাথে কথা বলছো। তোমাকে বসতে বললাম ঠাকুরপো। খাবার ছেড়ে উঠতে নেই। খেয়ে নাও নাহলে আমি খুব রাগ করবো।

-আর নাটক করতে হবে না। মা ছেলের মধ্যে অশান্তি লাগিয়ে সাধু সাজা হচ্ছে? তোমার মত মেয়েদের আমি ভালো করে জানি।

আদি কে ইশারায় চুপ করে খেতে বলে শিল্পা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে চোখের জল মুছতে লাগলো। হঠাৎ হাতে রাখা ফোনটা বেজে উঠতেই শিল্পা দেখলো‌ ওর ননদ অদ্রিজা কল করছে। কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে অদ্রিজার গলা ভেসে এলো।

-হ্যালো, বৌদি কেমন আছো?

-আমি ভালো আছি রে। তুই কেমন আছিস? সুজয়ের কি‌ খবর?

-সেও দিব্যি আছে। বলছি বৌদি মায়ের ফোনটাতে কল করলে নেটওয়ার্ক কভারেজ এরিয়ার বাইরে বলছে। তুমি একবার মাকে ফোনটা দাও না।

-সে না হয় দিচ্ছি। সম্পর্ক টা কি শুধু মায়ের সঙ্গে? আরো যে একটা দাদা, ভাই আর নতুন বৌদি আছে তাদের কথা মনে পড়েনা বুঝি? একবার তো দেখতে আসতেও মন যায়না?

-তা তো করে বৌদি। তাই তো‌ চলে এলাম তোমাদের দেখতে।

-মানে?

-আরে দরজাটা খোলো। তবে‌ তো আমাকে দেখতে পাবে।

দরজাটা খুলতেই অদ্রিজা জড়িয়ে ধরে শিল্পা কে বললো,

-সারপ্রাইজ টা কেমন লাগলো বৌদি? খুব মিস করছিলাম তোমাদের তাই তো চলে এলাম দেখা করতে।

-খুব খুব ভালো লাগলো। মাঝে মধ্যে এরকম সারপ্রাইজ দিতে পারিস তো। তা পতিদেব কোথায়?

এই যে বৌদি আমি এখানে।

-কতক্ষণ আর বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে? ভেতরে এসো।

-মা দেখুন কারা এসেছে।

-কি হলো ? ষাড়ের মতো চিৎকার করছো কেন?

-ও মা! আমার মেয়ে জামাই এসেছে। এসো ভেতরে এসো। এই মেয়েটা নিশ্চয়ই এতক্ষণ তোমাদের বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলো? কোনো কাণ্ডজ্ঞান নেই। শুধু বড় বড় বাতেলা।

-মা তুমি কিছু না জেনে শুধু শুধু বৌদিকে কেন দোষারোপ করছো? আমরা জাস্ট দু মিনিট হলো এসেছি। এত ওভাররিয়্যাক্ট করার কিছু হয়নি।

-আসতে না আসতেই বৌদির গুনগান করা শুরু হয়ে গেল?

-উফ! তোমার সাথে কথা বলা বেকার। বৌদি ভাই কোথায় গো? দাদা আজকেও বাড়িতে নেই?

না রে। তোর দাদা তো কনফারেন্সের জন্য দিল্লি গেছে আর আদি ওর রুমে শুয়ে আছে।

-এই বৌদি তোমাদের লাঞ্চ হয়ে গেছে?কেমন অসময়ে এসে পড়লাম বলো? ওকে কতবার করে বারণ করলাম এখন না গিয়ে বিকেলে চলো। একেবারে বৌদি, দাদা, আদি সবাইকে নিয়ে মুভি দেখে ডিনার করে বাড়ি ফিরবো। তা উনি বললেন দুপুর থেকে যাবো সবার সাথে একটু করব হৈ হুল্লোড় করবো। মজা হবে তারপর বিকেলে মুভি দেখে ডিনার করে বাড়ি ফিরবো।

-নিজের বাড়ি আসবি তো এটাতে আবার সময়ে অসময়ে আসার কি আছে রে ? বিয়ে করে খুব বড়ো হয়ে গেছিস? আদির খাওয়া হয়েছে শুধু। আমার আর মায়ের বাকি। তুই আর সুজয় এসেছিস তোরাও এখানে লাঞ্চ করবি আমাদের সাথে।

বৌদি আমরা লাঞ্চ করে এসেছি।

-করে এসেছিস তো কি হয়েছে? আরেকবার করবি।

-বৌদি আমি একবার ভাইয়ের সাথে কথা বলে আসি।ব্যাটার কোনো খবর নেই। দিদিকে একদম ভুলে গেছে।

-ভাই এই ভাই… দরজাটা খোল। এই দুপুরে দরজা দিয়ে কোন‌‌ মেয়ের সঙ্গে কথা বলছিস?

-দিভাই তুই কখন এলি? আসলে হেডফোন লাগানো ছিলো ওই জন্য শুনতে পাইনি। তুই একা এসেছিস? জিজু আসেনি?

-হ্যাঁ। ও এসেছে। একটু পরে রেডি হয়ে নিস। বিকেলে মুভি যাবো তারপর রাত্রে ডিনার করে বাড়ি ফিরবো।

-আচ্ছা। ঠিক আছে।

-অদ্রি, সুজয় খেতে আয়। মা খেতে আসুন। খাবার বেড়ে দিয়েছি।

-এ কি বৌদি এতকিছু কি করেছো? বাপরে! আমি বা অদ্রি কেউই এত খাবো না। তুমি বললে তাই তোমার কথা কাটতে পারবো না তাই অল্প করে ভাত মুখে দিচ্ছি। তুমি ইলিশ টা উঠিয়ে নাও আর ডালটাও আমি বরং চিকেন দিয়ে খাচ্ছি।

-যেটা দিয়েছি চুপচাপ খাও। কিচ্ছু ওঠাবো না। অদ্রি তাড়াতাড়ি আয়। ভাতগুলো ঠান্ডা হচ্ছে তো। মা আসুন। অনেক বেলা হয়ে গেলো।

-এই তো বৌদি আসছি। তুমিও একেবারে আমাদের সাথে বসে যাও। আর কত দেরি করবে?

-এই যে মেয়ে একবার তো বললে। শুনতে পেয়েছি। এত চিৎকার করার কি আছে?

-বৌদির সাথে একটু ভালোভাবে কথা বলতে পারো না মা? তুমি আসতে দেরি করছো বলে তো তোমাকে বৌদি খেতে ডাকলো। চিৎকার কখন করলো?

-আমার সব কথাই তো এখন খারাপ লাগবে।

-আমার ভুল হয়েছে মা। আমি চিৎকার করে ডাকবো না। আপনি খেতে বসুন।

-বৌদি তুমিও বসে যাও আর দেরি করো না। কথায় কথায় অনেকটা বেলা হয়ে গেলো। আবার একটু পরে রেডি হয়ে বেরোবো।

-এ কি সুজয় এত কম ভাত! পাতে ডাল নেই, ইলিশ মাছ,  চাটনি কিচ্ছু দেয়নি এই মেয়েটা। চার পিস মাংস দিয়ে কি ভাত খাওয়া যায় নাকি? আমি তোমাকে মাছটা দি। শুকনো ভাত খেতে নেই ডাল দিয়ে ভাতটা মাখাও।

-হ্যাঁ গো মেয়ে তোমার ওই রাক্ষুসে পেটটাতে আর এত খাবার ঢুকবে? জামাইকে তো কিচ্ছু দাওনি। সব কি নিজের পেটে ঢোকানোর জন্য রেখে দিয়েছো নাকি?

-বৌদিকে নিয়ে আপনার সমস্যাটা ঠিক কোন জায়গাতে বলুন তো মা? আমি আর আপনার মেয়ে দুজনেই লাঞ্চ করে এসেছি তাই বৌদি কে বললাম যে আমাদের অল্প করে খাবার দিতে। আমাদের দুজনকে থালা সাজিয়ে ইলিশ মাছ, মাংস, চাটনি, ডাল সব দিয়েছে। আমরা খেতে পারবো না বলে উঠিয়ে দিয়েছি, আপনি কিছু না জেনে বৌদিকে কেন দোষারোপ করছেন?

-মালতি এদিকে একবার শোন। বাড়ি যাওয়ার সময় তোর ছেলের জন্য  মাংস আর দু পিস ইলিশ মাছ তুলে রেখেছি ওটা নিয়ে যাস।

-বড়ো ম্যাডাম দুদিন ধরে ছেলের জ্বর। কিচ্ছু খাচ্ছে না। বেকার ওর জন্য নিয়ে যাবো ও খাবে না‌ আর আমার স্বামীটা চলে যাওয়ার পর থেকে আমি আর মাছ , মাংস খায় না।

-খুব মহান কাজ করেছো। তুইও যখন খাস না তোর ছেলেও যখন খেতে পারবে না তো আর‌ কি করা যায়  বাড়ি যাওয়ার সময় পাড়ার মোড়ে  কুকুরগুলোকে দিয়ে দিবি।

-কিন্তু বড়ো ম্যাডাম বৌদি যে এখনো খাইনি। আমি তার ভাগের খাবারটা কি করে কুকুরকে দিয়ে দি বলুন? আমি পারবো না। পারলে আমাকে ক্ষমা করবেন।

-যা যা ভাগ এখান থেকে। বেশি নাটক করিস না।

-ছি ছি! তোমাকে আমার মা বলে ডাকতে ঘেন্না হচ্ছে।

-তোরা আমাকে ভুল বুঝছিস। আমি সেরকম কিছু বলতে চাইনি।

-আমি বা তোমার জামাই কেউই তোমাকে ভুল বুঝছি না। একদম ঠিক বুঝেছি। তোমার প্ল্যান ছিল দাদার বিয়েতে মোটা টাকা পণ নিয়ে বিয়ে দেওয়ার। তোমার তো সেই শখটা পূরণ হয়নি আর দাদা আর ভাই তোমার এই অন্যায় জিনিসগুলো মেনে নেয় না বলে কাছে তারা ‘মেরুদণ্ডহীন পুরুষ’ আর তাই তুমি নিজের ইগো স্যাটিসফাইড করার জন্য বৌদিকে অকারণ হিউমিলেট করো আর তোমার এটা নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে‌। তুমি মানসিকভাবে অসুস্থ।

-একটু ভুল বললে অদ্রি। তোমার মায়ের কাছে ওনার নিজের ছেলেরা ‘মেরুদণ্ডহীন পুরুষ’ কারণ দাদা আর আদি মায়ের অন্যায়গুলোকে সাপোর্ট করে না তাই তারা খারাপ। সে ক্ষেত্রে আমিও তো একই ক্যাটাগরিতে পড়ছি তাই না মা? কিন্তু তোমার মায়ের উত্তর হবে না। কারণ বেশিরভাগ বিয়ে হওয়া মেয়ের মা-বাবা চান তার মেয়ের হাসবেন্ড তার মেয়ের কথা শুনে চলুক, তার মেয়ে সুখে থাকুক কিন্তু সেই মায়েরই নিজের ছেলে যদি তার বউয়ের কথা শোনে, তার মতে একটা কাজ করলে , মায়ের অন্যায় না মেনে স্ত্রীকে সাপোর্ট করলে তখন সেই ছেলে হয়ে যায় ‘মেরুদণ্ডহীন’, ‘জোরু কা গোলাম’,’ বউপাগলা’ আরও কত কি। তফাৎটা এখানেই। সেই ছেলের বৌ টিকে শুনতে হয় নানা কটূক্তি। সেগুলো আর নাই বা বললাম মা। একটু আগে অনেক কথাই বলছিলেন সেগুলোর রিপিট টেলিকাস্ট করতে ইচ্ছে করছে না। আশাকরি আমি আমার কথাগুলো বোঝাতে পেরেছি?

অদ্রিজা বললো,

-টাকা দিয়ে জীবনে সব কিছু বিচার করা যায় না মা। বৌদি বিয়ে করে যখন এই বাড়িতে আসে বৌদির বাবা তোমাকে বলেছিলো – বেয়ান আমার মেয়েটার জন্মের পরেই ওর মা মারা যায়। ছোট থেকে মায়ের আদর পায়নি মায়ের ভালোবাসা কি জিনিস ও জানেনা। আমি জানি আপনি ওকে নিজের মেয়ের মতন ভালোবাসবেন। নাকি নিজের মায়ের মতনই ভালোবাসবে শ্রদ্ধা করবে, আপনাকে কোনোদিন কষ্ট পেতে দেবেনা। মেয়েটা কোনদিন কোনো অন্যায় করে থাকলে আপনার এই মেয়ের মতন ওকেও ক্ষমা করে দেবেন। আজ মানুষটা নেই। অষ্টমঙ্গলার পর বৌদিকে একটা বারের জন্য দেখতে আসার সুযোগ পেলেন না। ওপার দুনিয়ায় তোমার দেওয়া মিথ্যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে উনি ভালো আছেন।

-কি হলো খাবার ছেড়ে উঠে যাচ্ছিস কেন?

-আমি তোমার মত এতটা নির্লজ্জ হতে পারলাম না মা। বাড়ির বউকে অভুক্ত রেখে পাড়ার কুকুরকে খাইয়ে পুণ্য কামানোর আশা করলে ভগবান তোমাকে পাপের ভাগীদারই করবে।

-চলো সুজয়। আমরা এরপর সেদিনই এই বাড়িতে পা দেবো যেদিন মা বৌদিকে মন থেকে মেনে নিতে পারবে।

-জানিস অদ্রি, ভগবান আমাকে সব দিয়েছে তোর  দাদার মতন একজন স্বামী, আদি আর সুজয়ের মতন দুটো ভাই, তোর মতন একটা মিষ্টি বোনের এত ভালবাসা দিয়েও একটা জিনিস ঠিক কেড়ে নিয়েছে সেটা হল মায়ের ভালোবাসা। ওই কথায় আছে না কুচ পানে কে লিয়ে কুছ খোনা পড়তা হে। সেই হয়েছে আমার অবস্থা। এতকিছু পাওয়ার পরেও বিয়ের আগে আর পরে মায়ের আদর, ভালোবাসা আর স্নেহের পরশ না পাওয়ার আক্ষেপটা আমার রয়েই গেলো।

user

Writer & Blogger

Related Posts:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Popular Posts

Newsletter

JOIN THE FAMILY!

You have been successfully Subscribed! Please Connect to Mailchimp first

Featured Posts

Categories

Edit Template

Dhulobali, a platform for collaborative creativity. It empowers users to share ideas and innovate together in cultural arena.

Get In Touch

3540 Toringdon Way Suite 200 Charlotte, NC, US 28277